beef tehari
beef tehari

পুরান ঢাকার তেহারি


তেহারি আর বিরিয়ানির মধ্যে কিন্তু একটা সুক্ষ পার্থক্য আছে। রান্নার পদ্ধতিতে পার্থক্য তো আছেই সে সাথে তেহারি বিরিয়ানির তুলনায় অনেক হালকা মশলাদার হয় এবং রংটাও অনেক লাইট থাকে বিরিয়ানির মতো কালারফুল হয় না।
আমরা অনেকেই তেহারি রান্নাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মশলা দিয়ে বিরিয়ানী বানিয়ে ফেলেন …দোকানের তেহারির মতো কালারটাও আসে না। তাছাড়া সবধরণের মশলা তেহারীতে যায় ও না। পুরান ঢাকার অধিকাংশ তেহারি হাউজে যে রেসিপিতে রান্না করা হয় তার মূল বৈশিষ্ট হচ্ছে ”সাদামাটা মশলা” …..আমি চেষ্টা করেছি সেভাবেই রান্না করতে আর ফলাফল অতুলনীয়। দেখে নিন সেই রাজকীয় স্বাদের তেহারির সাদামাটা রেসিপি।

উপকরণ

  • ১ কেজি গরুর মাংস/ খাসির মাংস চর্বি সহ
  • ৩ কাপ পোলাও/বাসমতি চাল

(১ কাপ চাল = ২০০ গ্রাম, আমি ১ কেজি মাংসের জন্য ৬০০ গ্রাম চাল নিয়েছি। আর এই অনুপাতে রান্না করলেই তেহারি বেশি মজা হবে।)

  • ৫ কাপ পানি
  • ১ কাপ দুধ
  • দেড় চা চামচ স্বাদমত লবন
  • পৌনে ১ কাপ ঘি /সরিষার তেল / সয়াবিন তেল
  • ২/৩ কাপ পেঁয়াজ কুচি
  • ৩ চা চামচ আদা বাটা
  • ২ চা চামচ রসুন বাটা
  • ১০/১২টি কাঁচামরিচ বাটা/কুচি
  • ১ টেবিল চামচ তেহারি মশলা
  • ১/৪ কাপ টকদই
  • ২ চা চামচ বা স্বাদমত লবন
  • ২০-২৫ টি কাঁচা মরিচ
  • ২ টেবিল চামচ কিশমিশ
  • ১ চা চামচ কেওড়া জল

তেহারি মশলার রেসিপি

  • ১ টেবিল এলাচ
  • ২ ইঞ্চি মাপের ২ টুকরা দারুচিনি
  • একটা মাঝারি সাইজের জয়ফল
  • ২ টা জয়ত্রী
  • ১/২ চা চামচ সাদা গোলমরিচ

এই সব একসাথে না ভেজে কাঁচা অবস্থায় গুঁড়ো করে নিতে হবে। এটাই আমাদের তেহারি মশলা। প্রতি কেজি মাংসে ১ টেবিল চামচ করে এই মশলা ব্যবহার করতে হবে।


    প্রস্তুত প্রণালী

    • মাংসের টুকরোগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এবং অবশ্যই কিছুটা চর্বিসহ মাংস বাছাই করে নিবেন। হাড্ডি থাকলেও সমস্যা নেই না থাকলেও নয়।
    • চাল ভালো করে ৪/৫ বার কচলে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এবং ছাঁকনির ওপরেই বা আলাদা প্লেটে বিছিয়ে দিবেন যাতে আলগা ভেজা ভাব সরে একটু ঝরঝরে হয়ে যায়।
    • প্রথমেই মাঝারি আঁচে হাড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ হালকা করে ভেজে নিন। বেরেস্তার মতো সোনালী করে ভাজতে হবে না, একটু লালচে ভাব হলেই হবে। তারপর এতে আদা-রসুন ও কাঁচামরিচ বাটা দিয়ে ১ মিনিট একটু কষিয়ে নিন। তারপর তেহারি মশলা ও লবন দিয়ে আবার ১ মিনিট একটু কষিয়ে নিয়ে মাংস ও টকদই দিয়ে দিন। ৪ থেকে ৫ মিনিট এই আঁচে কষিয়ে আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। আগেই কোনো পানি দিবেন না। মাংস থেকে বের হওয়া পানিতেই মাংস প্রায় সেদ্ধ হয়ে যাবে।
    • তারপরও যদি মনে করেন মাংস শক্ত আছে তো ১ কাপ বা মাংস সেদ্ধ হতে যেটুকু পানি লাগে দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস ভালো মতো সেদ্ধ করতে হবে তবে একদম নরম বা গলিয়ে ফেলা যাবে না ।
    • মাংসের ঝোল শুকিয়ে মশলা গা মাখা ও তেল বের হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। হয়ে গেলে একটা ঝাঁজরি চামচ দিয়ে তেল মশলা থেকে মাংসগুলো তুলে নিন। তারপর ওই তেল মশলার মধ্যেই আগে থেকে ধুয়ে নিংড়ে রাখা চালগুলো ঢেলে ৪/৫ মিনিট ধরে একটু ভুনে নিন।
    • কিছুক্ষন ভুনে লবন, দুধ ও গরম পানি দিন। চাইলে পুরোটাই পানি দেয়া যাবে, যত কাপ চাল তার দ্বিগুন পানি। পানি ফুটে উঠলে তুলে রাখা মাংস দিয়ে মিশিয়ে দিন।
    • তারপর হাই হিটে বলোক আসা পর্যন্ত রান্না করুন। কিছুক্ষন পর পানি কমে আসলে আস্ত কাঁচামরিচ, কিসমিস, ও স্বাদমত লবন দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে দিন… তারপর আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন।
    • ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে চিনি ও কেওড়া জল ছিটিয়ে হালকা করে নেড়ে আবার ১০ মিনিটের জন্য ঢেকে দিন। এবার চুলা বন্ধ করে দিবেন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে ………
    • এবারও কি আমাকে বলে দিতে হবে? আচ্ছা বলেই দিচ্ছি। …গরম গরম পরিবেশন করুন, লেবু কাঁচামরিচ আর কাঁচা পেঁয়াজের সাথে।

    টিপস:

    • পুরান ঢাকার স্টাইলে তেহারি খেতে চাইলে সরিষার তেল অবশ্যই ব্যবহার করবেন। তবে এই তেহারি আপনারা শুধু ঘি / সরিষার তেল বা এমনি সয়াবিন তেলেও রান্না করতে পারেন। আবার সয়াবিন তেলের সাথে ঘি/ সরিষার তেল মিশিয়েও নেয়া যাবে।
    • উপকরণে কাঁচামরিচ দেখে মোটেও ঘাবড়াবেন না। এগুলো আপনার তেহারীকে মোটেও ঝাল করবে না, শুধু অসাধারণ এক সুগন্ধে ভরে দিবে আপনার তেহারীকে।
    • তেহারির মাংস যতটা সম্ভভ কম মশলা দিয়ে রান্না করবেন। তবে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু অবশ্যই দিবেন। আমি বলতে চাচ্ছি বিরিয়ানির মাংস যেমন মশলায় মাখা থাকে ওরকম হবে না। তেহারি বিরিয়ানির থেকে বেশ লাইট হয়।
    • চালে যখন পানি দিবেন তখন অবশ্যই ওটা গরম দিবেন। তাহলে পানি গরম হতে হতে চাল ও সেদ্ধ হতে থাকে না। গরম পানি দিলে ওটা তাড়াতাড়ি ফুটে বলে রান্নার পর তেহারি ঝরঝরা পাওয়া যায়।
    • তেহারি মানে চাল আর মাংস একসাথে রান্না তাই পানি ফুটে উঠলে মাংস দিয়ে মিশিয়ে দিন। বিরিয়ানির মত ভাত রান্না করে উপর দিয়ে মাংস বিছিয়ে দিবেন না।
    • বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না …..এতে চাল ভেঙ্গে যাবে ও রান্নার পর আঠালো হয়ে থাকবে। ঝরঝরে তেহারি পাবেন না।
    • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস…খাওয়ার আগে অবশ্যই একবার উপরওয়ালার নাম নিবেন। যিনি আমাদের জীবন দিয়েছেন এবং এত নিয়ামত দিয়ে ভরে রেখেছেন। সৌভাগ্য দিয়েছেন নানারকম মুখরোচক খাবার উপভোগ করার। খাওয়ার সময় তার কাছে এই নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতেই পারে। কি বলেন?

    Exit mobile version