সরিষা বাটা ইলিশ – সর্ষে ইলিশ রেসিপি

আহা!!!...ইলিশ খাবো আর সর্ষে দিয়ে রান্না করবো না এমন কি হয়…? বাঙালির ইলিশ খাওয়ার আসল মজা যে সর্ষে ইলিশে । বাঙালির ইলিশ বন্দনায় এই পদের নাম প্রথমেই চলে আসে। আর সেজন্যই আজ "ইলিশ পার্বন" আয়োজনে আমার পরিবেশনায় "সর্ষে ইলিশ"।

সরিষা বাটা দিয়ে ইলিশ
সরিষা বাটা দিয়ে ইলিশ

সরিষা বাটা ইলিশ – সর্ষে ইলিশ রেসিপি


আহা!!!…ইলিশ খাবো আর সর্ষে দিয়ে রান্না করবো না এমন কি হয়…? বাঙালির ইলিশ খাওয়ার আসল মজা যে "সর্ষে ইলিশে" । বাঙালির ইলিশ বন্দনায় এই পদের নাম প্রথমেই চলে আসে। আর সেজন্যই আজ " ইলিশ পার্বন" আয়োজনে আমার পরিবেশনায় "সর্ষে ইলিশ"।
আজকের রান্নাটা আমি একটু সেকেলের ঢঙে করেছি ঠিক যেমনটা আমাদের পরিবারের গুরুজন দাদি নানীরা করতেন। আজকের রান্নাতে আমি কোনো পেয়াজ, রসুন, আদা, জিরা কোনো কিছু ব্যাবহার করবো না যেমনটা আমাদের গুরুজনেরা করতেন ইলিশের আসল স্বাদটাকে ধরে রাখতে। আমি শুধু একটু টুইস্ট হিসাবে রান্নাতে টকদই ব্যাবহার করবো। আপনারা চাইলে বিনা দ্বিধায় এটাকে বাদ দিতে পারেন।

উপকরণ

  • ৪ টি ইলিশ মাছের বড় টুকরো ( মনে রাখবেন সর্ষে ইলিশ কিন্তু ছোট ইলিশ দিয়ে রান্না করলে ততটা মজার হয়না যতটা একটা পাকা বা বড় ইলিশে হয়। বড় ইলিশের ঘ্রান ও তার তেল খাবারটার স্বাদ আরো দ্বিগুন করে দেয়। তাই এই রান্নাটা করতে চাইলে একটু বাছাই করে বড় ইলিশটাই নেবার চেস্টা করবেন। আর আমি ইলিশের চারটুকরো নিয়েছি আপনারা চাইলে বেশিও নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে উপকরণগুলো পরিমানমত বাড়িয়ে কমিয়ে নিতে পারেন)
  • ১ টেবিলচামচ টকদই (ঐচ্ছিক)
  • ২ টেবিল চামচ সাদা সরিষা
  • ১ চা চামচ লাল সরিষা ( আপনারা চাইলে শুধু লাল সরিষা দিয়ে করতে পারেন৷ কিন্তু লাল সরিষা একটু বেশি ঝাঝালো থাকে। তাই আমি সাদা সরিষাটা বেশি নিয়েছি আর লাল সরিষাটা কম।)
  • ১/২ চা চামচ হলুদগুঁড়া
  • ১/২ চা চামচ মরিচগুঁড়া
  • ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ সরিষার তেল
  • ১ চিমটি কালোজিরা
  • ৫/৬ টি কাঁচা মরিচ আস্ত
  • স্বাদমতো লবন

প্রস্তুত প্রণালী

  • একটা বাটিতে সামান্য পানি নিয়ে তাতে টকদই, একটু লবন, শুকনোমরিচ গুঁড়া ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে গুলিয়ে রাখুন। অন্যদিকে একটা কাচামরিচ ও সামান্য লবণ দিয়ে সরিষাগুলোকেও পেস্ট করে হাফকাপ মত পানির সাথে মিশিয়ে গুলিয়ে রাখতে হবে৷ আমারা রান্নাতে সরিষার পানিটাই ব্যবহার করবো সরাসরি সরিষা বাটাটা নিবো না৷ 
  • এবার আমরা রান্নাতে চলে যাই। একটা প্যানকে চুলায় বসিয়ে তাতে আমরা যে পরিমান সরিষার তেলটা নিয়েছি সেটা ঢেলে দিই এবং তাপে দিয়ে তেলটাকে গরম করে নিই। তাতে একটু কালোজিরা ও একফালি কাচামরিচের ফোরন দিয়ে নিব। কালোজিরা ফুটে আসলে আমরা টকদই দিয়ে যেই পেস্টটা বানিয়েছিলাম সেটাকে ঢেলে দিব। তারপর দুই থেকে তিন মিনিট ধরে এটাকে একটু কশিয়ে নিতে হবে। 
  • মশলাটাকে কশিয়ে নেয়ার পর আমরা মাছগুলোকে আস্তে আস্তে প্যানে সাজিয়ে দিবো।আমরা এই মশলাটার তেল দিয়েই এখন মাছটাকে প্রথমে দুই মিনিটের মত কষিয়ে নিবো। এতে করে মাছটার আশটে গন্ধ চলে যাবে ও মাছটা হালকা ভাজাও হয়ে যাবে।তার সাথে এই কষানোতে মাছটা আধো সিদ্ধ হয়ে যাবে।(মনে রাখবেন সরিষা ইলিশের জন্য কিন্তু কখনোই মাছটাকে আগে ভেজে নিতে হয় না। এমন কাচা মাছটাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।)
  • মিনিট দুই মাছটাকে কষানোর পর আমরা দেখতে পারবো মাছটা থেকে হালকা তেল বের হয়ে আসবে। এই অবস্থায় সরিষার পানিটাকে দিয়ে দিতে হবে।একটা কথা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এই রান্নাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের মিডিয়াম অথবা মিডিয়ামের থেকে অল্প আঁচে করতে হবে।এবার এই আঁচে বাকি রান্নাটুকু করতে হবে,সরিষাতে যেই পানিটা দিয়েছিলাম সেই পানিটা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।আর এই পানি শুকিয়ে যেতে যেতে আমাদের মাছটাও পুরো সিদ্ধ হয়ে যাবে।
  • মাঝে একবার মাছটাকে উল্টিয়ে দিয়ে চার মিনিটের মত রান্নার পর আমরা দেখতে পাবো মশলার পানিটা শুকিয়ে আসছে ও মাছটাও সিদ্ধ হয়ে গিয়েছে।এখন চারটা কাচা মরিচ দিয়ে মাত্র এক মিনিট ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিয়ে রাখবো যাতে কাচামরিচের ঘ্রানটা রান্নাতে থেকে যাই।একমিনিট পর ঢাকনা খুলে আরোও তিন থেকে চার মিনিট রান্না করবো।এরপর আমরা নামিয়ে পরিবেশন করবো।( সরিষা পানিটা দেয়ার পর সর্বোমোট আট থেকে দশ মিনিট সময় নিবো পুরো রান্নাটা শেষ করতে)
  • ব্যাস এবার গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সাথে সরিষা ইলিশ উপভোগ করুন এবং সৃস্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিন আজকের দিনের এই সুস্বাদু খাবারের জন্য ।।

টিপস :

  • ১। সর্ষে বাটার সময় মিনিট পনেরো আগে ভিজিয়ে রাখবেন আর সাথে দুটো কাঁচা মরিচ ও লবন দিয়ে নিবেন তাহলে তেতো হবে না।
  • ২। যেহেতু সর্ষেতে ঝাঁজ থাকে তাই রান্নার সময় পরিমানের থেকে একটু কম ঝাল দিবেন নাহলে একটু কড়া গিন্নিমায়ের মতো ঝাল ঝাড়বে কিন্তু 😉
  • ৩। তেলে মরিচ ফোঁড়ন দেয়ার আগে একটু মাথাটা ভেঙে দিবেন তাহলে আর ওটা ফটাশ করে ফাটবেওনা আর তেল ছিটে আপনার সুন্দর হাতখানাকে কালো দাগে ভরে ও দিবে না। 🙂
Exit mobile version