বাংলাদেশী চমচম

bangladeshi chom chom
bangladeshi chom chom

বাংলাদেশী চমচম


আমি ঠিক যে পরিমাপে বানিয়েছি সেই মাপটাই দিচ্ছি…। আপনারা পরিমাপ ঠিক রেখে উপকরণের পরিমান কমবেশি করে নিতে পারবেন।
ঈদ মানেই খুশির বন্যা। খুশির পরিমানটা বাড়াতে নানারকম মুখরোচক খাবার বিশেষ করে মিষ্টিজাতীয় খাবার আমরা একটু বেশি করে থাকি এই দিনে। কেমন হয় যদি ঈদ বা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলে আপনার নিজের হাতের বানানো চমচম পরিবেশন করা যায়? ভাবছেন ঝামেলার ব্যাপার, যদি না হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই ঝামেলার ব্যাপার। তবে নিজের হাতের বানানো জিনিসের মর্মই আলাদা। তাই আপনাদের এই ঝামেলাকে একটু সহজ করে দিতে আমার আজকের চেষ্টা। আশা করছি একটু হলেও কাজে আসবে। আর একটি কথা আমি বলতে চাই, যে রসগোল্লা বানাতে পারে সে চমচম ও পারবে। দুটোর মধ্যে প্রস্তুত প্রণালী’তে খুব বেশি তফাৎ নেই, যদিও স্বাদে আলাদা।

উপকরণ

  • ২ কাপ ছানা
  • ১/৪ কাপ সুজি
  • ১/৮ চা চামচ বেকিং পাওডার

সিরার জন্য:

  • ৩ কাপ চিনি
  • ৫ কাপ পানি
  • ২ কাপ পানি ফুটন্ত গরম পানি

প্রস্তুত প্রণালী

  • ছানা, বেকিং পাওডার ও সুজি হাতের তালু দিয়ে হালকা করে ডলে ডলে ছানুন। মাখানোর পর ছানা টা মসৃন হবে এবং বল বানালে তাতে কোন চিড় থাকবে না, একদম মসৃন বল হবে তখন বুঝবেন ছানা একদম রেডি। তাই বলে অতিরিক্ত সময় দিনে ছানা মাখবেন না তাতে ছানার ফ্যাট বের হয়ে যায় আর মিষ্টি চুপসানো হবে। ৩ থেকে ৫ মিনিট ভালো করে মথে নিলেই হবে।
  • এবার ছানাটাকে সমান ১০- ১৫ ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট গোল বল বানান, তারপর একে চমচমের ওভাল শেপটা দিন । চিনি ও ৫ কাপ পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন, বাকি পানি আমরা পরে দিবো। হাই হিটে সিরা টগবগ করে ফুটে উঠলে বলগুলো ছেড়ে ভালকরে ঢেকে দিন মিনিট ৫/৬ এর জন্য, তারপর একবার ঢাকনা খুলে ভাপটা বের হতে দিন আবার লাগিয়ে দিন। সেই সাথে চুলার আঁচ কমিয়ে মিডিয়াম হাই করে দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বলগুলো ফুলে প্রায় ডাবল হবে। যদি সাদা চমচম বানাতে চান তাহলে সব মিলিয়ে ৪৫-৫০ মিনিট মত ফুটতে দিন তারপর চুলা বন্ধ করে ওভাবেই ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন ।
  • আর যদি ট্রাডিশনাল লালচে চমচম বানাতে চান তাহলে নিম্ন মাঝারি আঁচে ঢেকে মিষ্টিটাকে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা জ্বালাতে হবে। সিরার পানি শুকিয়ে কমে গেলে একটু করে গরম পানি দিয়ে দিবেন যাতে সিরা অতিরিক্ত ঘন না হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে আস্তে আস্তে মিষ্টিতে কালার চলে আসবে। কালার আসবে চিনির সিরার কারণে। চিনির সিরা হালকা ঘন হলেই হলদেটে একটা রং দেখা যায় আর এই রং তাই মিষ্টির গায়ে বসে যাবে।
  • এখন প্রশ্ন হচ্ছে অল্প সময়ে চমচমের কালার কিভাবে আসবে..? তাই এবারে শর্টকাট ও ফাঁকিবাজি একটা উপায় বলছি যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমি প্রয়োগ করে থাকি। তা হলো –২ টেবিলচামচ চিনি জ্বালিয়ে ক্যারামেল করে নিতে হবে। মিষ্টি সিরাতে দেয়ার ১৫ মিনিট পর ক্যারামেল সিরাতে দিতে হবে আর সেটা থেকেই অল্প সময়ে মিষ্টিতে গাঢ় রং বসে যাবে। সবমিলিয়ে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট থেকে ৩৫ মিনিট জ্বাল করলেই হবে।
  • হয়ে গেলে কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা ওভাবেই সিরাতে রেখে দিন। তারপর সাবধানে সিরা থেকে বাটিতে উঠিয়ে পরিবেশন করুন। চাইলে মাওয়া তে গড়িয়ে নিতে পারেন।

টিপস:

  • ছানা বানাতে দুধ ভালো না হলে মিষ্টি আশানুরূপ হবে না। তাই অবশ্যই ভালো মানের পূর্ণ ননী যুক্ত দুধ নিবেন, তাতে ছানা ভালো হবে। ছানা কাটতে আমি সিরকা/লেবু ব্যবহার করি না, ছানাতে এগুলোর একটা গন্ধ থেকে যায় আর একটু অসাবধান হলেই ছানা শক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া দই দিয়ে করলে ছানাটা বেশ সফট হয় আর মিষ্টিও ভালো হয়।
  • ছানা বানানোর সময় বেশিক্ষণ ফুটাবেন না। ছানা ও সবুজাভ পানি আলাদা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দিন। নাহলে ছানা শক্ত হয়ে যাবে। ছেঁকে নেয়ার পর ছানা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুলে ভেতরের ভাপে ছানা শক্ত হট থাকবে না। এতে ছানাটা সফট ও স্পঞ্জি হয়।
  • হাত দিয়ে প্রানপ্রনে চিপে ছানা থেকে পানি বের করার চেষ্টা করবেন না। ঝুলিয়ে রাখার পর একা একা পানি ঝরে গেলেই আপনি নরম রসালো চমচম বানানোর পারফেক্ট ছানা টা পাবেন ।
  • ছানাটা যখন মাখবেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে হাত ব্যাথা করে মাখার প্রয়োজন নেই। মিনিট ৫ মাখলেই হবে। ডলে ডলে ছানা’র জান বের করার কিছু নেই.., এতে ছানার ফ্যাট বের হয়ে মিষ্টি চুপসানো হবে।
  • যেহেতু লম্বা সময় ধরে সিরা জ্বাল হবে তাই খেয়াল রাখবেন যেন খুব বেশি ঘন না হয়ে যায়, নাহলে মিষ্টি শক্ত হবে। সিরা ঘন হয়ে হালকা হলদেটে রং দেখা গেলে যখন পানি দিবেন সেটা যেন ফুটন্ত গরম পানি হয়। নাহলে ঠান্ডা পানি দিলে সিরার তাপ কমে যাবে আর মিষ্টি চুপসে যেতে পারে।
  • আর যে হাড়িতে মিষ্টি বানাচ্ছেন সেটা যেন বেশ বড় হয়। মিষ্টি গুলো যেন হেসে খেলে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে ফোটানোর সময়। ছোট পাত্রে ঠাসা-ঠাসি করে বানাতে যাবেন না। এতে ঠিকমত ফুলবে না আর ফুললেও চ্যাপ্টা শেপ হবে।
Exit mobile version