বাংলাদেশি সাদা মিষ্টি রেসিপি

বাংলাদেশি সাদা মিষ্টি
বাংলাদেশি সাদা মিষ্টি

আমাদের দেশি মিষ্টিগুলোর নাম নিতে গেলে রসগোল্লা আর চমচমের পর সাদা মিষ্টির নামটা এমনিতেই চলে আসে। এই মিষ্টিটা দেখতে রসগোল্লার মতো হলেও খেতে গেলে বোঝা যায় স্বাদের পার্থক্য কতখানি।
রসগোল্লা আর সাদা মিষ্টির তৈরির পক্রিয়া কাছাকাছি হলেও একটুখানি টেকনিকের কারণে দুটোর টেস্ট ও টেক্সার আলাদা হয়।
আমার চ্যানেলে সাদা মিষ্টি বানানোর আরেকটি রেসিপি আছে , আপনারা চাইলে ওটাও দেখে নিতে পারেন আর সেভাবেও বানাতে পারেন।

উপকরনঃ


[tie_list type=”plus”]

  • ফুল ক্রিম দুধ – ১ লিটার-(দুধ ভালো না হলে মিষ্টি আশানুরূপ হবে না। তাই অবশ্য’ই ভালো মানের পূর্ণ ননী যুক্ত দুধ নিবেন। )
  • বাটার মিল্ক – ১ কাপ – (আমি সিরকা/লেবু দিয়ে করি না, ছানাতে এগুলের একটা গন্ধ থেকে যায়, তাছাড়া টকদই /বাটারমিল্ক দিয়ে করলে ছানাটা বেশ সফট হয় )
  • ঘি – ১ চা চামচ

সিরার জন্য :

  • চিনি – ১.৫ কাপ
  • পানি – ৩ কাপ

[/tie_list]

প্রনালিঃ


১। চুলায় দুধ দিয়ে ফুটতে দিন। বলোগ এসে গেলে অল্প অল্প করে বাটারমিল্ক দুধে ঢেলে দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে দিন।

২। ছানা ও সবুজাভ পানি আলাদা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দিন এবং ১ কাপ ঠান্ডা পানি ঢেলে দিন। এতে করে ছানা শক্ত হবে না এবং মিষ্টি অনেক সফট হবে।
এরপর একটা ছাঁকনির উপর সুতি কাপড় রেখে বা সরাসরি পানি থেকে ছানা তুলে নরমাল পানি দিয়ে হালকা করে ধুয়ে নিন।

৩। এবার ১ ঘন্টার জন্য কাপড় সহ ছানা টাকে ঝুলিয়ে বাড়তি পানি ঝরিয়ে নিন। বা ছাঁকনির উপরে ভেজা টিস্যু দিয়ে ঢেকে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন। পানি ঝরার আগে ছানাটাকে খুব বেশি চিপবেন না। একা একা পানি ঝরে গেলেই আপনি সফট রসগোল্লা বানানোর পারফেক্ট ছানা টা পাবেন ।

৪। পানি ঝরে গেলে ছানা একটা প্লেটে ঢেলে হাতের তালু দিয়ে হালকা করে ডলে ডলে ছানুন। মাখানোর ছানা টা মসৃন হবে এবং বল বানালে তাতে কোন চিড় থাকবে না, একদম মসৃন বল হবে তখন বুঝবেন ছানা একদম রেডি।

৫। এবার ছানাটাকে ছোট ছোট গোল বল বানান । চিনি ও পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। টগবগ করে ফুটে উঠলে বলগুলো ছেড়ে ভালকরে ঢেকে দিন। মিনিট ৫/৬ এর জন্য, তারপর ঢাকনা খুলে দিন। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বলগুলো ফুলে প্রায় ডাবল হবে। সব মিলিয়ে ৪৫ মিনিট মত ফুটতে দিন। এই ৪৫ মিনিটের মধ্যে অবশ্যই ২/১ বার গরম পানি সিরাতে মিলিয়ে দিবেন যাতে সিরা বেশি ঘন হয়ে মিষ্টি শক্ত না করে ফেলে। চুলা বন্ধ করে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। চাইলে ফ্যানের নিচে রেখে ঠান্ডা করে নিতে পারেন !

৬। ঠান্ডা হবার পর মিনিমাম ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সিরাতে রেখে তারপর তুলে নিন। এতে করে মিষ্টিগুলো সিরার মধ্যে মজে যাবে আর খেতেও অনেক বেশি টেস্টি হবে খেতে। সিরা থেকে তোলার পরে চলে মিষ্টির উপর মাওয়া ছড়িয়ে পরিবেশন করুন !

টিপস :


১। ছানা বানানোর সময় বেশিক্ষণ ফুটাবেন না। ছানা ও সবুজাভ পানি আলাদা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দিন। নাহলে ছানা শক্ত হয়ে যাবে।

২। ছানা কেটে গেলে তাতে একদম বরফ ঠান্ডা পানি দিলে কুকিং প্রসেস স্টপ হয়ে যাবে তাতে ছানাটা সফট ও স্পঞ্জি হয়।

৩। হাত দিয়ে প্রানপ্রনে চিপে ছানা থেকে পানি বের করার চেষ্টা করবেন না। ঝুলিয়ে রাখার পর একা একা পানি ঝরে গেলেই আপনি সফট রসগোল্লা বানানোর পারফেক্ট ছানা টা পাবেন ।

৪। ছানাটা যখন মাখবেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে হাত ব্যাথা করে মাখার প্রয়োজন নেই। মিনিট ৫ মাখলেই হবে। ডলে ডলে ছানা’র জান বের করার কিছু নেই ..এতে ছানার তেল বের হয়ে মিষ্টি চুপসানো হবে।

৫। যেহেতু বাড়তি আঁচে এবং ঢেকে মিষ্ট সিদ্ধ করতে হবে , তাই হারির ভেতরে চাপ কমাতে অবস্যই মাঝে মাঝে ঢাকনা তুলে বাতাস বের হয়ে যেতে দিন … নাহলে মিষ্টি দ্রুত ফুলতে ফুলতে ফটাস করে ফেটে যাবে। আর

৬। চুলাতে থাকাকালীন সময়ে যতবড় দেখাবে ঠান্ডা হবার পর মিষ্টি তারথেকে কিছুটা আকারে ছোট হবে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আসল ব্যাপার হলো মিষ্টি নরম আছে কিনা। চান ঠিক না হলেই মিষ্টি চুপসে একেবারে চ্যাপ্টা ও ভেতরে শক্ত হবে।

৭। আর যে হাড়িতে মিষ্টি বানাচ্ছেন সেটা যেন বেশ বড় হয়। মিষ্টি গুলো যেন হেসে খেলে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে ফোটানোর সময়। ছোট পাত্রে ঠাসা-ঠাসি করে বানাতে যাবেন না। এতে ঠিকমত ফুলবে না আর ফুললেও চ্যাপ্টা শেপ হবে।

১১। আর একটা কথা অস্থির হবেন না ….একবারেই সবাই সবকিছু পারে না। আমি প্রথম প্রথম যখন বানাতাম, মিষ্টি এতটাই শক্ত হত যে…কারো গায়ে মারলে যে ব্যাথা পেত নির্ঘাত। তারপর ও আমি চেষ্টা করে গিয়েছি। অনেক সময় + দুধ +দই+চিনি নষ্ট করার পর আজ আমি মোটামুটি বেশ ভালই বানাতে পারছি। এই যে টিপস গুলো দিলাম এর সব ই আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। তাই যদি প্রথম বারেই না পারেন মন খারাপ করার কিছু নেই। চেষ্টা কখনো বিফলে যায়না। ভালো থাকবেন সবাই।

ভিডিও: