রসে টুপটুপ ছানার রসবড়া বা রসমঞ্জরী পিঠা
পিঠাটা এতটাই মজা যে আপনি একবার না বানানো পর্যন্ত বুঝতে পারবেন না। আর বানানোর নিয়মটাও খুবই সহজ। তারপরও ছোট্ট একটা ''কিন্তু '' আছে। আর সেটা হলো অল্প আঁচে না ভাজলে আর অতিরিক্ত গরম সিরাতে পিঠা ফেললে পিঠার গায়ে ঠোস খেয়ে যাবে সাথে ভেতরে শক্ত রয়ে যাবে। এই যে ছবি গুলো দেখছেন এটা আমার দ্বিতীয় চেষ্টার ফল। প্রথমবারের ভুল গুলো শুধরে নেয়ার পরই, এরকম পারফেক্ট রসে টুপটুপে পিঠা পেয়েছি। টিপসসহ রেসিপি থাকলো , ইনশাআল্লাহ আপনাদের ভালো লাগবে।
উপকরণ
- ১ কাপ ছানা
- ১ টি ডিম বড়
- ১/২ কাপ বা প্রয়োজনমতো ময়দা
- ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা
- ১ চা চামচ ঘি
- ১ কাপ চিনি
- ২ কাপ পানি
- ২/৩ ফোঁটা কেওড়া জল
- ১ কাপ তেল
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমেই পানি ও চিনি জ্বালিয়ে সিরা করে নিতে হবে। এজন্য আপনাকে কোনো ''এক তার-দুই তার – সেতার'' যুক্ত সিরা বানানোর দরকার নেই। জাস্ট চুলায় দেয়ার পর সিরা টগবগ করে ২/১ বার ফুটে উঠলেই নামিয়ে নিন। তারপর কেওড়া জল টা দিয়ে মিশিয়ে নিন। এর মানে হচ্ছে আপনার সিরাটা মিষ্টি ঠিকই হবে কিন্তু অনেক পাতলা হবে যাতে করে আপনার পিঠার ভেতর খুব ভালোভাবে সিরা ঢুকতে পারে।
- এবার একটা বাটিতে ছানা, বেকিং সোডা ও ডিম দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। বেকিং সোডার বদলে বেকিং পাওডার ও দিতে পারেন। তবে পাউডার দিলে পরিমানে সোডার ডাবল দিবেন। এপর্যায়ে মিশ্রণটি বেশ পাতলা হবে। তারপর অল্প অল্প করে ময়দা দিয়ে মেশাতে থাকেন , যতক্ষণ না রুটির খামিরের মতো একটা খামির তৈরী হচ্ছে। তারপর খামিরটা ঘি দিয়ে ভালোকরে মথে নিন। চাইলে এসময় এক চিমটি লবন দিতে পারেন। তারপর ঢেকে মিনিট পনেরো রেখে দিন।
- ময়দার পরিমানটা আমি ১/২ কাপ লিখেছি কারণ আমার ওই পরিমান লেগেছে। আপনি একটু নিজের আন্দাজে দিবেন। কারণ হচ্ছে আপনি যদি বড় কোনো কাপে ছানা নেন তো একটা ডিম মেশানোর পর খামির তৈরী করতে খুব বেশি ময়দা লাগবে না। আর ছোট কাপে ছানা নিলে কিছুটা বেশি লাগবে।
- এবার মাখিয়ে রাখা খামির থেকে ছোট ছোট বল বানিয়ে নিন। এভাবে সরাসরি বল গুলোই ভাজতে পারেন বা হাতের তালুতে বলগুলো হালকা চাপ দিয়ে চ্যাপ্টা করে নিতে পারেন অথবা চ্যাপ্টা করার পর টুথপিক জাতীয় কিছু দিয়ে একটু নকশা করে নিতে পারেন। আমি সন্দেশ বানানোর মাটির ছাঁচে ফেলে একটু ফুলের মতো নকশা করে নিয়েছি।
- এবার ভাজার পালা…মাঝারি আঁচে তেল গরম করে নিন। তারপর আঁচ নিম্ন মাঝারি করে নিন। এবার ৪/৫ টি করে পিঠা গরম তেলে ফেলে ভাজতে থাকুন। আবারো বলছি তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে ভাজুন। জোরে আঁচে বা অতিরিক্ত গরম তেলে ভাজলে পিঠার বাইরের অংশ বাদামি হলেও ভেতরে কাঁচা থেকে যাবে , ফলাফল ভেজানোর পর আপনার পিঠার ভেতরে রস ঢুকবে না এবং শক্ত রয়ে যাবে। তাই নিম্ন মাঝারি আঁচে ধীরে সুস্থে পিঠার দুইপাশ হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত ডুবোতেলে ভাজুন।
- এবার সিরাতে ভেজানোর পালা। পিঠা ভাজা হয়ে যাবার সাথে সাথে তেল থেকে তুলে উষ্ণ সীরাতে ছেড়ে দিন। তবে সাবধান সিরাটা যেন কোনো ভাবেই খুব বেশি গরম না হয় , তাহলে কিন্তু আপনার পিঠা চুপসে যাবে। তাই আঙুল ডোবানো যায় এমন গরম সিরাতে ভাজা পিঠাগুলো ছাড়ুন। আর তেল থেকে তোলার পর তেল ঝরানোর জন্য অনেকক্ষন ধরে না রেখে টপাটপ তেলথেকে তুলে সিরাতে ফেললে ভালো ফলাফল পাবেন।
- সিরাতে পিঠা দেয়ার ১৫/২০ মিনিটের মধ্যেই পিঠা ফুলে দ্বিগুন হয়ে উঠে। চাইলে তখন খাওয়া যাবে। তবে আপনি যদি একটু বেশি সময় সিরাতে ভিজিয়ে রাখতে পারেন তো আসল স্বাদ টা পাবেন। আমি রাতে বানিয়ে ভিজিয়ে রেখেছিলাম। সকালে খেয়ে দেখি জাস্ট অমৃত। এত এত এত বেশি মজা আর রসে টইটুম্বুর হয়ে ছিল যে বলে বোঝানো যাবে না। তাই অবশ্যই একবার বানিয়ে দেখবেন , আপনি এর প্রেমে পরে যাবেন। কিন্তু একটু সাবধানে টিপস গুলো মেনে বানাবেন প্লিজ।
Leave a Review