রসগোল্লা
রসগোল্লা…, এটা শুধু একটা মিষ্টি নয়। বাঙালীর ঐতিহ্যের সাথে মিলেমিশে আছে এই নাম। এপার বাংলা বলুন আর ওপার বাংলা…মিষ্টি মানেই রসগোল্লা। দিনে দিনে যত বাহারি স্বাদের বা নামের মিষ্টিই আসুক না কেন রসগোল্লার জায়গা কেও কখনো নিতে পারে নি। চলুন আজকে এই রসগোল্লা বানানোর অদ্যোপান্ত জেনে নেয়া যাক।
উপকরণ
- ১ লিটার ফুল ক্রিম দুধ
- ১ কাপ টক দই
- ২ চা চামচ সুজি/ময়দা
- ১ চা চামচ তেল
- ১ চা চামচ চিনি
সিরার জন্য:
- ২ কাপ চিনি
- ৪ কাপ পানি
প্রস্তুত প্রণালী
- চুলায় দুধ দিয়ে ফুটতে দিন। বলোগ এসে গেলে দই একটু ফেটে নিয়ে দুধে ঢেলে দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে দিন। ছানা ও সবুজাভ পানি আলাদা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দিন। একটা ছাঁকনির উপর সুতি কাপড় রেখে ছানা থেকে এই পানিটা ফেলে সাথে সাথে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এতে করে ছানা শক্ত হবে না এবং মিষ্টি অনেক সফট হবে।
- এবার ঘন্টা খানেক কাপড় সহ ছানা টাকে ঝুলিয়ে বাড়তি পানি ঝরিয়ে নিন। পানি ঝরার আগে ছানাটাকে খুব বেশি চিপবেন না। একা একা পানি ঝরে গেলেই আপনি সফট ছানাটা পাবেন। ১ কাপের মতো হবে।
- এবারে একটা ছড়ানো প্লেটে ছানা, তেল, চিনি ও সুজি হাতের তালু দিয়ে হালকা করে ডলে ডলে ছানুন, যাতে ছানার দানা ভেঙে ছানাটা মসৃন হয়ে যায় । মাখানোর পর ছানা দিয়ে বল বানালে তাতে কোন চিড় থাকবে না, একদম মসৃন বল হবে তখন বুঝবেন ছানা একদম রেডি।
- এবার ছানাটাকে সমান ১০ ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট গোল বল বানান । চিনি ও পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। হাই হিটে সিরা টগবগ করে ফুটে উঠলে বলগুলো ছেড়ে ভালকরে ঢেকে দিন মিনিট ৫/৬ এর জন্য, তারপর একবার ঢাকনা খুলে আবার লাগিয়ে দিন। সেই সাথে চুলার আঁচ মিডিয়াম হাই করে দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বলগুলো ফুলে প্রায় ডাবল হবে। সব মিলিয়ে ৩৫-৪০ মিনিট মত ফুটতে দিন তারপর চুলা বন্ধ করে ওভাবেই ৫/৬ ঘন্টা সিরাতে ভিজিয়ে রাখুন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
টিপস:
- দুধ ভালো না হলে মিষ্টি আশানুরূপ হবে না। তাই অবশ্যই ভালো মানের পূর্ণ ননী যুক্ত দুধ নিবেন, তাতে ছানা ভালো হবে। ছানা কাটতে আমি সিরকা/লেবু ব্যবহার করি না, ছানাতে এগুলোর একটা গন্ধ থেকে যায় আর একটু অসাবধান হলেই ছানা শক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া দই দিয়ে করলে ছানাটা বেশ সফট হয় আর মিষ্টিও ভালো হয়।
- ছানা বানানোর সময় বেশিক্ষণ ফুটাবেন না। ছানা ও সবুজাভ পানি আলাদা হয়ে গেলেই চুলা বন্ধ করে দিন। নাহলে ছানা শক্ত হয়ে যাবে। ছেঁকে নেয়ার পর ছানা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুলে ভেতরের ভাপে ছানা শক্ত হট থাকবে না। এতে ছানাটা সফট ও স্পঞ্জি হয়।
- হাত দিয়ে প্রানপ্রনে চিপে ছানা থেকে পানি বের করার চেষ্টা করবেন না। ঝুলিয়ে রাখার পর একা একা পানি ঝরে গেলেই আপনি সফট রসগোল্লা বানানোর পারফেক্ট ছানা টা পাবেন ।
- ছানাটা যখন মাখবেন ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে হাত ব্যাথা করে মাখার প্রয়োজন নেই। মিনিট ৫ মাখলেই হবে। ডলে ডলে ছানার জান বের করার কিছু নেই.., এতে মিষ্টি চুপসানো হবে।
- পুরোটা সময় একদম হাই হিটে জ্বাল করবেন না … তাতে মিষ্টি দ্রুত ফুলতে ফুলতে ফটাস করে ফেটে যাবে। আর বেশিক্ষণ ঢেকে রেখে ও জ্বাল দিবেন না….তাতেও মিষ্টি ফেটে যায়। আবার অনেক বেশি সময় নিয়েও ফুটাবেন না।তাহলে মিষ্টি শক্ত হয়।
- সিরা বেশি ঘন করবেন না,পাতলা হতে হবে। নাহলে মিষ্টির ভেতরে সিরা ঢুকবে না আর ভেতরে শক্ত থেকে যাবে। ২৫-৩০ মিনিট ফুটানোর পর একটা মিষ্টি তুলে ঠান্ডা পানিতে ফেলুন যদি ডুবে যায় তাহলে বুঝবেন হয়ে গিয়েছে। এরপর আর খুব বেশিক্ষণ ফুটাবেন না। সব মিলিয়ে ৩৫-৪০ মিনিট মত ফুটতে দিন তারপর চুলা বন্ধ।
- আর যে হাড়িতে মিষ্টি বানাচ্ছেন সেটা যেন বেশ বড় হয়। মিষ্টি গুলো যেন হেসে খেলে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে ফোটানোর সময়। ছোট পাত্রে ঠাসা-ঠাসি করে বানাতে যাবেন না। এতে ঠিকমত ফুলবে না আর ফুললেও চ্যাপ্টা শেপ হবে।
- আর একটা কথা অস্থির হবেন না…., একবারেই সবাই সবকিছু পারে না। আমি প্রথম প্রথম যখন বানাতাম, মিষ্টি এতটাই শক্ত হত যে…কারো গায়ে মারলে যে ব্যাথা পেত নির্ঘাত। তারপর ও আমি চেষ্টা করে গিয়েছি। অনেক সময় + দুধ + দই + চিনি নষ্ট করার পর আজ আমি মোটামুটি বেশ ভালই বানাতে পারছি। এই যে টিপস গুলো দিলাম এর সব ই আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া। তাই যদি প্রথম বারেই না পারেন মন খারাপ করার কিছু নেই।
Leave a Review